দরিদ্র ব্রাহ্মণের একটি উত্তরীয়, এক মহান দান
এক ছিল শ্রাবস্তী নগরের এক গরিব ব্রাহ্মণ ও তাঁর স্ত্রী। তাদের এতটাই দারিদ্র্য ছিল যে, দু’জনের পরার মতো একটি মাত্র উত্তরীয় বস্ত্র ছিল। ফলে, যখন একজন বাড়ির বাইরে যেত, অন্যজনকে ঘরে বসে থাকতে হতো।
একদিন সন্ধ্যার সময়, সেই ব্রাহ্মণ ধর্মকথা শুনতে গিয়েছিলেন ভগবান বুদ্ধের কাছে। বুদ্ধের শান্তি ও জ্ঞানে মুগ্ধ হয়ে ব্রাহ্মণ ভাবলেন, জীবনে সবচেয়ে মূল্যবান যা আছে, সেটিই দান করা উচিত। আর তাঁর কাছে ছিল শুধু সেই একটি উত্তরীয় বস্ত্র—তাই তিনি তা খুলে বুদ্ধকে দান করলেন।
ধর্মসভায় সেই সময় উপস্থিত ছিলেন কোশলের রাজা, প্রসেনজিৎ। তিনি এই দানের কথা শুনে অভিভূত হয়ে পড়েন। তিনি ভাবলেন, যে মানুষ নিজে না খেয়ে, না পরে এইভাবে দান করতে পারে, তার চেয়ে বড় উদারতা আর কী হতে পারে! তিনি সেই ব্রাহ্মণকে পুরস্কার স্বরূপ বহু সম্পদ দান করলেন।
পরে ভিক্ষুরা এই ঘটনা নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠলে বুদ্ধ একটি গাথা বললেন:
"কল্যাণকর্মে দেরি করো না, পাপ থেকে চিত্তকে ফিরিয়ে রাখো। যদি দ্বিধা নিয়ে পুণ্য করা হয়, তবে মন পাপের দিকেই আকৃষ্ট হয়।"
এই গাথার ব্যাখ্যায় বুদ্ধ বুঝিয়ে দিলেন — যখনই মনে পুণ্যকর্ম করার ইচ্ছা জাগে, তখনই তা করে ফেলা উচিত। দেরি করলে দ্বিধা জন্মায়, আর সেই দ্বিধা চিত্তকে পাপকর্মে আকৃষ্ট করতে পারে। আবার যদি পাপের চিন্তা মনে আসে, তবে তা শক্ত হাতে দমন করা উচিত। কারণ একবার যদি পাপের প্রতি মন ঝুঁকে যায়, তবে সেটিই অভ্যাসে পরিণত হয়।
এইভাবেই এক গরিব ব্রাহ্মণের ছোট্ট ত্যাগ, তাঁর মহত্ত্বের প্রতীক হয়ে উঠল, আর তা থেকে শিক্ষা নিল পুরো সমাজ।
